মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৮ অপরাহ্ন

দেশে প্রথম দেখা মিলল কালিপেঁচা

দেশে প্রথম দেখা মিলল কালিপেঁচা

স্বদেশ ডেস্ক;

হাজারো শিক্ষার্থীর গান-গল্প, ভালোবাসা-বন্ধুত্ব, হাসি-কান্না, কখনো উষ্ণ ছোঁয়া- যুগের পর যুগ বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্যারিস রোড’। দুই ধারে চোখ ধাঁধানো সুউচ্চ গগনশিরিষ গাছ। কখনো বিদ্রোহে কেঁপে উঠেছে তার বুক, কখনো ভালোবাসায় শীতল হয়েছে; আবার কখনো তাজা রক্তের সঙ্গে মিশেছে প্যারিসের পিচঢালা পথ। তবে নিত্য সকাল-সন্ধ্যায় নানা পাখির কলতান মুগ্ধ করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। এবার এ রাস্তায় দেখা মিলেছে বিরল প্রজাতির এক পাখির। নাম ছোট কালিপেঁচা, যার বৈজ্ঞানিক নাম এষধঁপরফরঁস জধফরধঃঁস ও ইংরেজিতে ডাকা হয় ঔঁহমষব ঙষিবঃ বলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ আনিসুজ্জামান মো. সালেহ রেজা গত ১৩ অক্টোবর সকালে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে প্রথম এ পাখির ডাক শুনতে পান। পাখিটির বেশ কিছু ছবি ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে অন্য প্রজাতির পেঁচা থেকে আলাদা করতে সক্ষম হন এ গবেষক। নিশ্চিত হন এটি বিরল প্রজাতির ছোট কালিপেঁচা, যে পাখি দেশে আগে কখনো দেখা যায়নি।

পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে পেঁচার প্রজাতি আছে ২৫০টি। বাংলাদেশে রয়েছে ১৮টি প্রজাতি, যার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা মিলে ছয়টির। এখন নতুন প্রজাতি কালিপেঁচার দেখা মেলায় সংখ্যাটা বেড়ে গেল সাতে। তবে ছোটাকৃতির নতুন এ পেঁচাটি অন্য সব প্রজাতি থেকে একটু আলাদা। বাদামি রঙের পাখায় রয়েছে কিছু কারুকাজ। গোলাকার মাথায়ও বাদামি ডোরাকাটা। এ প্রজাতির পেঁচাদের একা, জোড়ায় বা ছোট দলে পাওয়া যায়। এদের বিচরণ মূলত ভারত ও শ্রীলংকার সমভূমিতে। এ ছাড়া আর্দ্র অঞ্চল ও জি. রেডিয়াটাম শুষ্ক বনাঞ্চলেও পাওয়া যায়।

বিরল প্রজাতির পাখির বিষয়ে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য হাসনাত রনি বলেন, ‘এ প্রজাতির পেঁচা আগে দেশের কোথাও দেখা যায়নি। ফলে এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বেশি জানা নেই। তবে এরা অন্ধকারাচ্ছন্ন গাছে বসবাস করতে পছন্দ করে। এ ছাড়া এশীয়-দাগিপেঁচার সঙ্গে এ পাখির কিছুটা মিল রয়েছে, যাদের সাধারণত সিলেট অঞ্চলে দেখা যায়।’

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মো. সালেহ রেজা বলেন, ‘প্রথমে পাখিটির ডাক শুনে মনে হয়, আগে কখনো এমন ডাক শোনা হয়নি। পরে পাখিটির ছবি তুলে ও ডাক সংগ্রহ করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং ইন্টারন্যাশনাল বার্ড ক্লাবের ওয়েবসাইটে পোস্ট করি। এর পর ওই দুটি ক্লাব ও ভারতীয় বার্ড ক্লাব নিশ্চিত করে পাখিটি ছোট কালিপেঁচা। এ প্রজাতির পাখি আগে দেশে দেখা যায়নি। বিভিন্ন সময় একই রকম পাখি দেখে অনেকে ছোট কালিপেঁচা দাবি করলেও সেটির কোনো প্রমাণ নেই। তবে এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে প্রথম পাখিটি দেখা যায়। ফলে দেশের পাখি তালিকা আরও সমৃদ্ধ হলো।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ পাখিরা কোনোভাবে বিরক্ত হলে আর থাকবে না। অন্যদিকে বিভিন্ন সময় ফটোগ্রাফাররা এর ভালো ছবি তুলতে সর্বদা চেষ্টা করছেন। এটিতেও তারা বিরক্ত হতে পারে। এ ছাড়া ছবি তোলার সময় পাখিরা ভয় পেতে পারে। তাই নতুন এ প্রজাতির পাখিকে সংরক্ষণের জন্য সবার সহযোগিতা জরুরি।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877